সেই দেবশিশু নানা ভাবে ইনাইয়া বিনাইয়া তাহার গল্প বলিতে লাগিল, সে প্রতিদিন কি করে, তাহার কয়খানা পুতুল, কোন পুতুলের কি নাম, তার কোন পুতুল তাহার সাথে কি রঙ তামাশা করে। কোন পুতুল দিয়া সে কি খেলা করিয়া থাকে, কাহার কোন আচরণ তাহার ভালো লাগে না। তাহার মা কেমন ভাবে তাহাকে বকিয়া থাকে, ডে-কেয়ারে গিয়া সে কাহার সহিত কি দুষ্টুমি করে, এইসব বলিতে বলিতে প্রায় ঘণ্টা খানেক পার হইয়া গেল, এর মাঝে গল্প প্রসঙ্গে তাহার বাবার কথা আসিলে জনৈক ব্যাক্তির মনে পড়িল তিনি কেন এখানে আসিয়াছেন। কিন্তু এই দেবশিশুর আপ্যায়নে আর সেবায় তিনি সকল জ্বালা যন্ত্রণা ভুলিয়া গিয়াছিলেন। মনে পড়িয়া যাওয়ায় তিনি শিশুটিকে বলিলেন, তোমার বাবাকে একটু ডাকবে? সে বলল, বাবা তো বাসায় ই আছেন, আমি ডেকে আনছি। ডাক্তার সাহেব, এসে দেখলেন, এই বেচারার হাত দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে তখনো রক্ত পড়ছে, তবে খুবই ধীর গতিতে। তিনি আর তুলা সরাইলেন না, তাহাকে সরাসরি বলিলেন হাসপাতালে চলিয়া যাইতে। তিনি উপায়ান্তর না দেখিয়া ট্যাক্সি ডাকিয়া চলিয়া গেলেন হাসপাতাল।

হাসপাতাল গেলে তাহার হাত সেলাই করা লাগিল, নানা রকমের ওষুধ পাতি দিয়া তাহাকে কর্তব্যরত ডাক্তার তাহাকে বাড়ি পাঠাইয়া দিলেন। পরের সপ্তাহে যখন তার ব্যথা বেদনা আর নাই, তিনি গিয়া হাজির হইলেন সেই ডাক্তার সাহেবের বাসায়, আবার কড়া নাড়িলেন, এইবার ডাক্তার ব্যাটাই দরজা খুলিয়া দিল, কিন্তু তাহাকে দেখিয়া জনৈক ব্যক্তির ভ্রূ কুঞ্চিত হইয়া গেল। ডাক্তার ব্যাটা ভাবিল, তাহাকে ধন্যবাদ জানাইতে আসিয়াছে মনে হয়, এই প্রতিবেশী। কিন্তু তিনি তাহাকে অবাক্ করিয়া দিয়া তিনি বলিলেন, আপনার কন্যা কই? তাহাকে ধন্যবাদ দিতে আসিলাম। এইবার তো ডাক্তার ব্যাটার অবাক্ হইবার পালা, কিন্তু, তিনি তাহাকে অবাক্ করিয়া বলিলেন, যার কাছ থিকা প্রকৃত সেবা পাইয়াছি, সেই তো আমার ডাক্তার, তাহাকেই ধন্যবাদ জানাইতে আসিয়াছি।


No comments:
Post a Comment