Monday, October 19, 2009

নব্য রাজাকারের সাদাকালো চোখে রঙিন দুনিয়া

প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে দৌড়াই নিউজার্সির পানে, মাথায় ঘুরে নানা রকমের চিন্তা ভাবনা। আসলে বাইরে অনেক ঠাণ্ডা থাকায় কাঁচ নামাতে পারি না, অনেক ঠাণ্ডা লাগে, কাজেই ভেতরে থাকে প্রায় সুনসান নীরবতা। এই সময়টা তাই ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করি। এখনো অবাক্‌ হই যে আমাদের দেশে এবং বিদেশে উড়ে নরপিশাচদের পতাকা, ঘুরে বেড়ায় তারা ভদ্র মানুষের মুখোশে, আর তারচেয়েও ভয়ংকর হল যে, এরা আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে আমাদের মাঝে। পাল্টে নিচ্ছে নিজেদের প্রকাশভঙ্গী, ভাবটা যেন, তারা আমাদেরই একজন। অথচ প্রথম থেকেই এরা যুদ্ধ করে যাচ্ছে আমাদের ভাষা, আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, এরা চায় আমরা পাকিদের গোলাম হব, আর যদি মাথা নত না করি, আঘাত হানে পঙ্গু করে দেবার জন্যে। জানি না কীভাবে এদের শেষ হবে, কবে এদের শেষ হবে কিংবা আদৌ এদের শেষ হবে কিনা। যখন একা একা এভাবে ভাবি, গা হাত পা অবশ হয়ে আসে, মনে হয়, যদি পেতাম বেটা গো-আ কে গাড়ির সামনে, ধুম করে চাপা দিয়ে চলে যেতাম।আমার আজকের লেখাটা নিতান্তই আমার অনুর্বর মস্তিষ্কের কিছু অর্থহীন চিন্তাভাবনা। কোন সত্যতা নাই, কোন তথ্য প্রমাণ নাই, পুরোপুরি বানোয়াট। আসুন আমার সাথে কাল্পনিক এক রাজাকারের ভ্রান্ত ধারণা দেখার একটা চেষ্টা করি, হয়ত পারব না দিতে কিছুই, যদি কারো খারাপ লাগে, তার জন্যে আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আমার হিসাবে রাজাকারেরা শুধু ২ দলের মানুষ চিনে, নিজের দল, আর বিপক্ষ দল, আর তাদের খোরাক হল ধর্ম নামের ভ্রান্ত ধারণা। ধর্মের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই, অথচ ধর্মের নামে এরা ছুরি চালায়। এরকমই একজন বক ধার্মিকের সাথে পরিচিত হই, ধরেন তার নাম বেলাল। গালে তার এক ছাগলা দাড়ি, চোখে সুরমা, গা থেকে আসে আতরের খোশবু। আসেন তার চিন্তা চোখ দিয়ে একটু দুনিয়াটা দেখি। আবারও বলে নেই, এটা নিতান্তই একটা কাল্পনিক চরিত্র। কারো সাথে কোন মিল পাওয়া গেলে তা একবারেই কাকতালীয়।

বেলাল সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের আজান শুনে, উঠে চারদিকে তাকায়, মনে পড়ে যায়, সে থাকে ২ কাফেরের সাথে রাজশাহী চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের হলে, এত থাকতে কিনা তাকে থাকতে হল ধর্মের নামে বিধর্মী এই দুই মানুষের সাথে, আল্লাহ খোদার নাম নাই, সারাদিন খালি হৈহুল্লা, আমার তার পিছনে তাকে কিনা তারা গালাগালি করে। জীবনে দেখল না সে তাদেরকে একদিনও ঘুম থেকে উঠতে। ফজরের আজানে নাকি তাদের ঘুমের অবসুবিধা হয়। কতবড় কথা। পারলে সে আজকেই এদের রগ কেটে রেখে দিত। যাক, এদের দিয়ে কোন ভবিষ্যত নাই, প্রথম প্রথম সে এদেরকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিল, সে জন্যে তাকে তারা কতভাবেই না লাঞ্ছনা গঞ্জনা করল, সহ্য হয় এসব?

সকালে উঠে সে প্রাত্যহিক কাজকর্ম সেরে তৈরি হয়, ক্লাস শুরু হবে ৭টায়, সেখানেও আসবে যতসব ধর্ম সম্বন্ধে উদাসীন লোকজন, এদের মাঝে তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসে, কীভাবে যে এমন হল, তার দেশ পাকিস্তান কীভাবে যে আলাদা হয়ে গেল, কোথাকার কোন নেতা এসে ডাক দিল, আর সবাই তার সাথে করে মেরে পিটিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে কিনা বানিয়ে দিল বাংলাদেশ, এটা কোন নাম হল? নেতা হবে তো নিজামী বা গোলাম আযমের মত নুরানী মানুষ, আহা কি অসাধারণ না তার ব্যক্তিত্ব, মানুষ জবাই করার সময় ও তার হাত কাঁপে না একটু। কত কাফের যে জবাই দিল আমাদের এই মহান নেতা। আর তার চেহারায় কি রোশনাই, দেখলেই যেন তুর পাহাড়ের জেল্লা দেখা যায়।

ক্লাস শেষে গজ্‌গজ্‌ করতে করতে বের হয়ে আসে বেলাল, বের হয় যেন দম ফিরে পায়, আগামী ২ ঘণ্টা কোন ক্লাস নেই, এই ফাঁকে নতুন ভর্তি হওয়া পুলাপাইন গুলাকে যদি একটু দীনের আলো দেখানো যায়। এই ভাবতে ভাবতে সে ক্যান্টিনে গিয়ে হাজির হয়, দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে গিয়ে হাজির হয় একটা জটলার মাঝে। গিয়ে সালাম দিয়ে কথা শুরু করে সে, বলে, আসেন ভাই, আপনাদের মাঝে কেউ যদি আগ্রহী হন, আমরা একটা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে বই বের করতে যাচ্ছি, সেটা নিয়ে কেউ কাজ করতে পারেন। আমরা পুরান প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করি, তারপর তা একসাথে ছাপাই, আমাদের উদ্দেশ্য মহৎ, আসেন ভাইয়েরা, আমাদের মত ছাত্র যারা, তাদের পড়াশুনার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন, বিনিময়ে টাকাও পাবেন কিছু। এমন বড় কোন পরিমাণ না, তবে কয়েকদিনের চা নাস্তা তো হবে। আর মনে মনে হাসে, এসব কাজ টাজ সব ভাঁওতা, বেটা, খালি আয় মীটিং এ, মগজ ধোলাইয়ের জন্যে বিগ বস করিম ভাই তো আছেই, এক মাসের মধ্যে দীনের শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে যাবি। কিন্তু রকিব নামের একটা ছেলে ফট করে বলে ফেলে, যা বেলাল, তোর মত ফ্যানাটিক দলে কাজ করবার কোন আগ্রহ এখানে কারো, মিয়া দিনের বেলায় এক বেশ, আর মওকা পাইলেই তোর মাঝের ২ নম্বরী সত্বাটা বাইর হইয়া আসে।

মাথায় যেন আগুন ধরে যায় বেলালের, ব্যাটা কাফের বলে কি? প্রথম দিন থেকেই এই ব্যাটা তাকে নানাভাবে আজেবাজে কথা বলে সবার সামনে যার পর নাই নাজেহাল করে যাচ্ছে, নাহয় ব্যাটা পড়াশুনায় ভালো তাই বলে এভাবে আকথা কুকথা বলে তাকে অপমান করবে? করিম ভাইকে বলতে হবে, এই হারামাজাদাকে সাইজ না করলে আর চলছে না। আজকে রাতেই কথা বলবে। এরপরে সে গিয়ে হাজির হয় তার এক বন্ধুর সাথে, কাছে যেতেই সে সালাম দিয়ে কোলাকুলি করে, তারপর দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে দুজনে ২ চেয়ার নিয়ে বসে। তারপর শুরু হয়, আজকে কে কোথায় কি দেখেছে, একে অপরকে বলতে থাকে, মোটামুটি আধাঘণ্টা খবর বিনিময়ের পর কথা প্রসঙ্গে রাজনীতি চলে আসে, এখনো তারা ভুলতে পারে না, শেষ নির্বাচনে কি হল? এভাবে দেশের মানুষ তাদের অপমান করল, তার যদি ক্ষমতা থাকত, এসব লোকদের একপাশ থেকে ধরে জবাই করে মাংস হিসাবে চীন দেশে পাচার করে দিত। সে শুনেছে, চৈনিকরা নাকি খায়না এমন কিছু নাই। সেবার যমুনা ব্রিজ বানাতে এসে এলাকার সব কুকুর, সাপ, ব্যাঙ খেয়ে সাফ করে ফেলেছিল। তার এই মত প্রকাশ করতে তার বন্ধু তাকে ঠিক করে দেয়, আসলে ওরা চীনা ছিল না, কোরিয়ান ছিল। বেলাল বলে, যে দেশেরই হোক, সবই তো চাঙ্কু, এরা আবার মানুষ নাকি, কেমন পোকার মত, সাদা সাদা, চেপটা চেপটা।

যাক, তারপর তার বন্ধু খবর দেয়, আজকে রাতে কিন্তু করিম ভাইয়ের সাথে মীটিং আছে। তারা একে অপরকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায় যে যার পথে। বেলালের ক্লাসের সময় হয়ে গেছে, সে আবার হাঁটা ধরে, এ ক্লাসটা তার খুব পছন্দ, যিনি ক্লাস নেন, মহান ব্যক্তি, তিনি তাদের দলের সাথে যুক্ত, বহুদিন থেকেই, উড়া খবরে শুনেছে, ছাত্রজীবনে নাকি সে অনেক বড় কর্মী ছিল, এক ছাত্রকে সে নাকি ধীরে ধীরে গিরা ধরে ধরে আলাদা করেছে, কেউ তার টিকিটাও স্পর্শ করতে পারেনি। এখন অবশ্য তাকে দলের স্বার্থেই এসব করতে দেওয়া হয় না, তার একটা সামাজিক স্থান আছে, তার কাজ এখন আরো বড় বড় কাজ করা। বেলালের খুব ইচ্ছা তার মত কাজ করার। যাক, হয়ত সে সুযোগ আসবে কোন একদিন। আগে কি দিন ছিল, কথায় কথায় উনারা রগ কেটে ফেলতেন, এখন আর সে দিন নেই, সবাই নাকি সচেতন হয়ে গেছে, খুব নাকি ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে। এই নিয়ম আর বাধা তার ভালো লাগে না। এসব চিন্তা করতে গিয়ে চোখ চকচক করতে থাকে তার।

স্যারের ক্লাস শেষ হয়ে, আবারো বের হয়ে মনে মনে বলে, আহা কি সুন্দর করেই না কথা বলেন তিনি, কত সুন্দর করেই না বুঝান, কোন দিন যদি তার মত হতে পারেন। আবার ক্যান্টিনে ফিরে আসে সে, পত্রিকা তুলে নেয়। পত্রিকা পড়তে ইচ্ছা করে না আর। সারাদিন ২ বেহায়া বেটি গলায় গলায় ঝগড়া করে, মাইয়া মানুষ, ঘরে থাকবে, সংসার করবে, স্বামীর খেদমত করবে, তা না, তেনাদের কত রকম ত্যানাপ্যাচানি। দেশ গোল্লায় না গেলে যাবে কই? রমযান মাস গেল, সাথে সাথে গেল তাদের মাথার কাপড়। কত্তবড় বদমাইশ, চিন্তা করতে করতে বেলালের মাথাটা গরম হয়ে যায়। ২ নেত্রীর একজন তাও তাদের দলের প্রতি সহানুভূতিশীল, তবে তার মতে, ক্ষমতায় কোনদিন তাদের বড়নেতা যদি আসতে পারেন, ২ বেটিকেই ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। গুপ্ত হত্যা করতে হবে, দেখাতে হবে সবাইকে যে, কোন দুর্ঘটনায় মারা গেছে এরা। অপেক্ষা আর ভালো লাগে না তার।

দুপুরে খেতে তাকে যেতে হবে হলে, যাবার পথে আবার রকিবের সাথে দেখা হয়ে যায়, দেখা হতেই টিটকারি মারে রকিব, সে তাকে দেখিয়ে বলে, দেখ দেখ, ছাগলা দাড়ি যায়। যান বেলাল ভাই, বেশি করে দোহন করেন, দেখেন দীনের আলো বের হয়ে আসতে পারে। না, আর তো পারা যায় না, সেদিন তার রুমমেটের সাথে দেখা করতে এসেছিল রকিব, এসে কত হইচই, তারপর তারা তার লুঙ্গির মাঝে ফুটা করে রেখে গেছে, তার তোষকে পানি ঢেলে রেখে গেছে। রাতে শুতে গিয়ে বেলাল লাফ দিয়ে উঠে এসেছে। পরে যখন সে তার রুমমেটকে ধরেছে, সে স্বীকার করেছে যে, এই কুকাজ রকিবই করেছে। হলে আসতে ১০ মিনিট সময় লাগে, খেয়ে দেয়ে বেলাল রুমে এসে একটা রিপোর্ট তৈরি করে, আজ রাতে বলতে হবে, করিম ভাইকে, কাকে কাকে কিভাবে দুর্বলতা সুযোগ নিয়ে দলে ভেড়ানো যায়, কার অভাবের টান বেশি, সাহায্যের নাম করে প্রথমে কাছে টানতে হবে, তারপর আস্তে আস্তে মনের ভেতরে জায়গা করে নিতে হবে, তারপর একদিন ঐ ব্যাটা ভোদাই জানবেও না সে তাদের দলের কর্মী হয়ে গেছে। এই সপ্তাহে সে সম্ভাবনাময় কয়েকজন কে খুঁজে পেয়েছে। আর ৩ জন কে দলে ভেড়াতে পারলে সে অন্যদের থেকে এগিয়ে যাবে। তখন তাকে আরো বেশি ক্ষমতা দেওয়া হবে, এই সুযোগের জন্যে কতদিন ধরে অপেক্ষা করে আছে। এই দোকানদারি আর ভালো লাগে না তার।

তার ক্লাসের সহপাঠিদের মাঝে মেয়ে এবার অনেক বেশি। এ ব্যাপারটা তার খুব গা জ্বালা দেয়, সব কাজ সবার জন্যে না, লেখাপড়া করা কি মেয়েদের কাজ? তারপর আবার পাশ করে অনেকে কিছুই করে না, ঘরে বসে থাকে, ঘরেই যদি বসে থাকবি তো, এখানে আসার কি দরকার ছিল? একটা ভালো বিয়ে করার জন্যে এখানে আসার কি দরকার? এ ব্যাপারটাও বড় নেতার নজরে দেওয়া দরকার। মেয়েগুলা দিন দিন কেমন বেহায়া হয়ে উঠতেছে, কি তাদের বেশভুষা, অবশ্য একটা মেয়েকে তার খুব ভালো লাগে, কি সুন্দর বোরখার আড়ালে মুখ ঢেকে আসে, তাকে দেখলেই বেলালের হৃদয়ে পাখি কুউ কুউ ডাকে, সে পাশ করেই এই মেয়েটাকে বিয়ে করবে, এ কথা চিন্তা করতেই সে উত্তেজিত হয়ে যায়, আরো বেশি বেশি দাড়িতে হাত বোলাতে থাকে। আর বেশি না, ৪ বছরেই তার পড়াশুনা শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু এর মাঝে কেউ যাতে কুদৃষ্টি না দেয়, এজন্যে তাকে জানাতে হবে তার মনের কথা। আর সে চায়, বিয়ে করে তার স্ত্রী ঘরকন্না করবে, আর বছর ফিরতেই ফুটফুটে খুদে বেলালের জন্ম দিবে, এসব স্বপ্ন দেখতে দেখতে বেলাল মিয়ার দ্বীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে।

বিকালের সময়টা বেলাল মসজিদে কাটিয়ে দেয় সাধারণত, কাজেই বিকাল হতেই সে রওনা দেয় সে পথে, যাবার পথে তার কওমি দীনের আরো ৫ জনকে সাথে নিয়ে যায়। আজকে জিকিরে বসে একটু খাস দিলে দোয়া করে বেলাল, যেন আজকে করিম ভাই তার প্রতি একটু সদয় হয়। তারপর সন্ধায় মসজিদ থেকে বের হয়ে বন্ধ গেট টপকিয়ে গ্রেটার রোড হয়ে গিয়ে হাজির হয় বর্ণালি সিনেমা হলের পাশের স্টলে, এখানে সাধারণত তাদের মীটিং হয়। গিয়ে সে দেখে, প্রায় সবাই চলে এসেছে। অপেক্ষায় বসে থাকে বেলাল, তার সময় আসলে সে জানায় এই সপ্তাহে সে কাজ বেশ এগিয়েছে, ৫ জনকে মোটামুটি সে নিশ্চিতভাবে দলে টানতে পারবে। শুনে করিম খুশি হয়ে যায়। ২ জনের বাবা নেই, খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে, সংসারে মা ছাড়া কেউ নেই একজনের, কিছু অর্থদিয়ে সাহায্য করলেই তাকে দলে টানা যাবে, অন্যজনার জন্যে আরেকটু কষ্ট করতে হবে, সে লেখাপড়ায় একটু বেশি দুর্বল, কাজেই পড়াশুনায় সাহায্য করলে কাজ উদ্ধার হবে, তবে এ ব্যাটা ষাড়ের মত তাগড়া, তার মত পেশি তাদের দলে খুব দরকার। এসব শুনে করিম খুব খুশি হয়। করিমের মুখে হাসি দেখে বেলাল বলে উঠে, ভাইমনি, আমার একটা আর্জি ছিল। এই যে রকিব, এই চ্যাংড়া কিন্তু আমাকে খুব নাজেহাল করছে, একে একটু সায়েস্তা না করলেই না। যত্রতত্র যার তার সামনে তাকে অপমান করে। আর সে লীগ করে, আমাদের নামে যা তা বলে বেড়ায়, এই সপ্তাহে ঐ বদমায়েশের জন্যে আমার ৩ টা মানুষ ছুটে গেছে। তাদের এমন কানপড়া দিল যে কি বলব!

এসব শুনে করিম নিজের দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে চিন্তা করে, দেখি, কি করা যায়। তার ব্যাপারে আসলেই কিছু করা দরকার। কিন্তু সামনাসামনি কিছু করা যাবে না। কোনভাবে যেন কেউ জানতে না পারে, আমরা কোনভাবে এসব কাজে জড়িত। তুমি মীটিং শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বেলাল বসে থাকে, ২ টা বন রুটি আর ২ টা কলা ধ্বংস করে বসে বসে, আমার বুদ্ধিতে শান দিতে থাকে। মীটিং শেষে করিম বলে, চল বেলাল, রিকশায় উঠ্, যেতে যেতে বলি। করিম বলে, এভাবে তুমি সবার সামনে এ ধরনের অভিযোগ করবা না না, সবাইকে তো আর বিশ্বাস করা যায় না। তোমারে গহরের সাথে জুটায় দিতাছি। সে এই ব্যাপারে কাবিল, এমন ভাবে কাম সারবে, ডান হাতের কাম বাম হাত ও জানতে পারবে না। এসব শুনে বেলালের চোখ ধ্বক ধ্বক করে জ্বলতে থাকে, আজকে সে হেনস্তা করবে রকিবের। বাইর করতেসি তোর মুক্তমনা চিন্তাভাবনা আর তোর রাজনীতি। উপশহরে এসে একটা বাড়িতে হাজির হয় তারা ২ জনে, একটা বাসার কড়া নাড়ে করিম, এখানে আগে আসে নাই বেলাল। একটা বনমানুষ দরজা খুলে দেয়। এই লোকটাকে তার খুব চেনা চেনা লাগে। তারপর মনে পড়ে, আরে এ তো সেই লক্ষীপুর মোড়ের বাজারের কসাই। কি নিপুণ হাতেই না মাংস কাটে। করিম এসে বুঝিয়ে দেয়, কি করতে হবে।

রাত বাজে সোয়া ১১টা, ১১ টার পরপর মেয়েদের হলের গেট বন্ধ করে দেয়, সারাদিন প্রেমের নামে বেলেল্লাপনা করার পর রকিব বাসায় ফেরে সোয়া ১১টার দিকে, ক্যাম্পাসের গেটের পানির ট্যাংকির পাশ দিয়ে হেটে যায়। এ স্থানটা বেশ নির্জন থাকে এ সময়ে, তারা পানির ট্যাংকির নিচে লুকিয়ে থাকে। এর মাঝে রকিব শিস দিতে দিতে এগিয়ে আসে, কাছে আসতেই বেলাল তাকে ডাকে, রকিব খুব নির্ভীক ছেলে, কোন পরোয়া না করে সাড়া দেয় সে, কাছে এসে বলে, আরে এ যে দেখি আমাদের ছাগলা দাড়ি বেলাল। কি ভাইজান, এইখানে আন্ধারে কি কর? বেলাল বলে উঠে, পিপিলীকার পাংখা গজায় মরিবার তরে, খুব বাড় বেরেছে তোমার। রকিব হাসি মুখেই বলে, আরে মস্করা করি, চেতো কেন? কিন্তু, অন্ধকারে রকিব দেখতে পায় না বেলালের খুদার্ত শার্দুলের চকচকে চোখ। কিছু বোঝার আগেই পেছন থেকে গহর এসে ধরে ফেলে রকিবকে। তারপর পানির ট্যাংকির নিচে প্রায় কোলে করে নিয়ে আসে, রকিবের চিৎকার কেউ শুনতেও পায় না, কেউ থাকলে না পাবে।

গহর রকিবকে পেড়ে ফালে ডানপাশে কাত করে, তারপর হাটু দিয়ে বুকের উপর চেপে বশে, আর বাম হাত দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরে, আর বেলাল গরু জবাইয়ের ছুরি হাতে এগিয়ে হাসে, মুখে পিশাচের হাসি, চোখ জোড়া যেন ২টুকরা জ্বলন্ত হীরা। তার এক হুংকার দিয়ে বেলাল ছুরি চালায়, ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে, আর বেলাল সেই ফিনকি দেয়া রক্তের সাথে শ্বাসনালী দিয়ে বের হয়ে আসা ফোস ফোস শব্দ শুনে হা হা করে হেসে উঠে, আর বলে, কে হাসছে শেষ হাসি, কাফেরের বাচ্চা কাফের? তারপর রকিবের রক্ত হাতে মাখিয়ে নেয় বেলাল, বুকভরে নেয় সেই রক্তের গন্ধ, কেমন যেন নোনতা মিষ্টি একটা গন্ধে ভরে যায় চারদিক। তারপর ছটফট করতে থাকা রকিবের দেহটা নিষ্প্রান আর স্থির হয়ে যায় এক সময়ে। কিন্তু কসাই গহরের কাজ তো তখনো শেষ হয় নি, সে রকিবের হাত পা আলাদা করে ফেলে কেটে, তারপর বস্তায় ভরে, তারপর সেই দেহটা নিয়ে চিড়িয়াখানায় যায়। তারপর গিয়ে এক টুকরা করে বাঘের খাচায় করে ফেলে দেয়। কেউ যানতেও পারেনি আজ পর্যন্ত রকিবের কি হয়েছিল সে রাতে।

No comments:

Post a Comment