Tuesday, October 20, 2009

আমাদের কুদ্দুস ভাই

"সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
সারাদিন যেন আমি লেখালেখি করি"

নারে ভাই, কবিতা লেখতেছি না, মারতেছিও না। এইটা হইল আমাদের বিখ্যাত লেখক এবং ব্লগার আবদুল কুদ্দুস ওরফে আকু ভাইয়ের মূলমন্ত্র। সকালে তার ঘুম ভাঙ্গে এই মন্ত্র জপতে জপতে। তারপর তিনি জৈবিক কার্য সেরেই ব্লগ খুলে বসেন। বহুত পুরানো ব্লগার তিনি, লেখেনও সেই রকম। হাবিজাবি ব্লগ সাইটে লেখার মত পাতি ব্লগার নন তিনি। হাজার হলেও সিনিয়ার মানুষ তো। তার মত কৃতিমান ব্লগারের কথা জানতে পেরেও বুকের মাঝে কেমোন চিলিক পারা আনন্দের সৃষ্টি হয় যে কি বলব, ঘুমের মাঝেও চিক্কুর পাইরা উঠতে ইচ্ছা করে।

তা উনার নিজেরই ব্লগ সাইট আছে আকুপাকু.কম নামে, সেখানে তিনি ব্লগ লেখতে লেখতে চুল দাড়ি পাকায় ফেললেন প্রায়, তার ব্লগে আবার নাম ধাম নিতে কোন সমস্যা নাই, তিনি খাপ খোলা লেখা লেখতে যেমন পছন্দ করেন, তেমনি পছন্দ করেন অন্যের খাপ খোলা মন্তব্য শুনতে। আর যেহেতু উনার ব্লগে কেউ কারো মাথায় ছড়ি ঘুড়ায় না, এজন্যে যে যার মত ব্লগ লিখে যায়। কিন্তু সুখে থাকলে মানুষকে ভুতে কিলায়, ফলাফল আমাগো আকু ভাইরেও ভুতে ধরল, তিনি নিজের ব্লগের মান নির্ধারনের জন্যে অন্যান্য ব্লগে ঢুঁ দেওয়া শুরু করল। এইভাবে সে একদিন সচলায়তনে এসে হাজির হল।

এইখানে এসে আকু ভাই বুঝল যে, আরে এই খানে তো অনেক কিসিমের লেখা আসে, অনেক সমঝদার লোকও আছে, এইটা না তার আসল ঠিকানা। কাজেই সাথে সাথে নিবন্ধন করে ফেললেন আমাদের আকু ভাই। কিন্তু মর জ্বালা, এখানে তো নিয়ম কানুন অন্যরকম, প্রথমে অতিথি নামে লিখতে হয়, তারপর মডু দাদারা সেটা পড়ে মান বুঝে ছাড় দেন। তিনি তো হেসেই কুল পান না, তার লেখা ঠেকাবে এমন মডারেটর আছে নাকি ত্রিভুবনে! ২ কাপ চা পিরিচে ঢেলে খেয়ে ফেললেন তিনি, তারপর পিরিচটাও চেটে নিয়ে আঙ্গুল মটকিয়ে লেখতে বসলেন।

পারলে আজকেই নামিয়ে দিবেন টেলিশের টেলিফোন বইয়ের সমান লেখা। তরতর করে করে লেখে যেতে লাগলেন তিনি। মোটামোটি পাতা পাঁচেক লেখার পর ভাব্লেন, এত উচ্চ মার্গের লেখা তো মনে হয় না এখানে কেউ লেখে, তাই এখানেই ক্ষ্যান্ত দেওয়া যাক আজকে রকমের মানসিকতা নিয়ে লেখা পুস্টায় দিলেন। বুঝেন অবস্থা, এ কালের সেরা ব্লগার তিনি, আর ধৈর্যের কোন কমতি নাই, তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আকুপাকু.কম, আর সচলে লেখা দেওয়া তো কোন ব্যাপারই না। ব্লগিং কাকে বলে বুঝিয়ে দেবেন তিনি সবাইকে। সচলকে সমৃদ্ধ করবেন তিনি, এই সংকল্পে বদ্ধপরিকর হলেন আমাদের আকু ভাই।

রাতে লেখা দিয়ে ঘুমাতে গেলেন, সকালে উঠে দেখেন, বাহ, প্রথম পাতায় ঝকঝক করছে তার লেখাটা। তার লেখায় ১২ টা মন্তব্যও পড়েছে, গর্বে তার বুক ফুলে উঠে, আনন্দে আলাজিহ্বা বের হয়ে যায়। পোস্ট খুলে তিনি আঁৎকে উঠেন, একি, ৫ টে ১ তারা দিয়েছে তাকে কে যেন। কার এত বড় সাহস! তার তো মাথা গরম হয়ে যায়, গরম মাথা নিয়েই মন্তব্য পড়তে শুরু করেন। বিশাল মন্তব্য করেছে তার প্রথম মন্তব্যকারী, নানা ভাবে তাকে জ্ঞান দিয়েছে, আর বলেছে বই পড়তে, সে যা লিখেছে, তা নাকি কোন ভাবেই বাংলা নয়। রাগে তিনি কাঁপতে থাকেন, কাঁপা হাতেই জবাব দিতে থাকেন। আরে ব্যাটা বিশিষ্ট লেখক হুমাও তো মায়ের পেটে থেকে পড়েই লেখা শুরু করেছে। সেখানে সে নাহয় আরেকটু পরেই লেখা শুরু করেছে, তাই বলে এত বড় কথা। সে কিনা কত দিনের ব্লগার। আকুপাকুতে তার উপদেশ পাবার জন্যে অন্যেরা হা করে বসে থাকে।

তিনি প্রথম লেখেন ৭ বছর বয়সে, প্রথম লেখা ছিল একটা হাসির গল্প, সেটা পড়ে কেন জানি কেউ বুঝল না, প্রথম এক প্যারা পরেই পড়িমড়ি দৌড়, তবে পাড়ার পাগলা মজনুকে তিনি পড়ে শুনিয়েছিলেন গল্পটা, কিন্তু পাগল মানুষ তো গল্প শুনিয়ে শেষ করতে না করতে রক্তবমি করতে করতে পাগলাটা মারা গেল। কিন্তু তাতে তার লেখা আটকায় থাকে নাই। ১৮ বছর বয়সে তিনি ব্লগিং শুরু করেন। তার ব্যাপারে উড়া কথা শুনা যায়, তিনি নাকি স্কুলে থাকতে রচনা লেখলে স্যারেরা পড়ার মত ধৃষ্টতা দেখাতেন না। খাতা না খুলে ১৫ তে ১২ দিয়ে দিতেন। পাছে যদি আবার আকু ভাই তার বাবা মাকে ডেকে আনেন, তখন তাদের সমানে ঐ রচনা তো পড়তে হবে, আসলে মজনুর কথা কেউ ভুলতে পারে নাই।

যাক, আস্তে আস্তে তার রাগ পড়ে আসে, আসলে এরা বুঝতেই পারে নাই, তিনি কি লিখেছেন, তাই এসব আবোল তাবোল মন্তব্য করেছে। আর তিনি তো "সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কিসের ভয়" এ বিশ্বাসী, ১০-১২ টা খারাপ মন্তব্যে ভয় পাবার প্রশ্নই আসে না, কাজেই মন্তব্য করা বাদ রাখলেন। বরং দ্বিতীয় লেখায় হাত লাগালেন। দেখ ব্যাটারা, এবার আরো সহজ করে লেখব, যেন বুঝতে পারিস। তারপর কাজে চলে গেলেন। নানা কাজের ফাঁকে সচলে আসতে পারেন নি, ফলে দেখতে পেলেন না, তার দ্বিতীয় লেখার করুন পরিণতি।

এবারে মন্তব্য এসেছে আরো বেশি, কিন্তু সমস্যাটা তিনি বুঝতে পারলেন না, তার লেখা কেউ বুঝতে পারছে না কেন? এবারে তো এক্কেবারে সহজ করে লেখলেন, কি মুসিবত। যাক দানে দানে তিন দান, আবার লেখতে বসলেন। এবারেও যদি তার লেখা কেউ বুঝতে না পরে, তাহলে তো ইজ্জত নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। এদিকে আকুপাকুর সবাই জেনে গেছে তিনি সচলে লেখা দিয়েছেন। আবারো লেখা দিলেন, এবারে দেখা গেল, তার লেখায় প্রায় কোন মন্তব্যই পড়ে নাই, তবে ভোট পড়েছে প্রায় ১০টা ১ ভোট। রাগে দিশেহারা হয়ে গেলেন আমাদের প্রি্য ব্লগার আকু ভাই। আজকে তোদের একদিন কি আমার একদিন। হঠাৎ করে মাথায় এক বুদ্ধি এল, আসলে এখানে সাড়া পেতে হলে তাকে এদের মত করে লেখতে হবে, কাজেই কয়েকজনের পুরানো ব্লগ ঘাটতে লাগলেন, একটা লেখা খুব পছন্দ হল, সেটা খুব জনপ্রিয় এই ব্লগ সাইটে।

কাজেই তিনি ছদ্মনাম হাকু নিয়ে ঐ লেখাটার আদলে আরো রসিক আরেকখানা লেখা দিলেন। কিন্তু দেখা গেল, এক ভোদাই অতিথি ফাল পাড়তে পাড়তে এসে তাকে খুব গালমন্দ করল, তাছাড়া অন্যান্য যারা ছিলেন, তারাও ভ্রদ্রতার রাশ টেনে ধরে অনেকভাবে তাকে কথা শুনিয়ে দিল, কিভাবে যেন বুঝেও গেল, যে তিনি আকু ভাই। কাজেই তাকে বিদায় নেওয়া ছাড়া উপায় থাকল না। মহা বিপদ, তিনি বুঝতে পারলেন না, পূর্ণ সচল যারা, তারা নাহয় তাকে উপদেশ দেন, কিন্তু যারা অতিথি, তারা কেন এমন তাফালং করে, তিনি আর তারা তো একই দলে। কি উগ্র ভাবেই না তারা তাকে নিয়ে পরিহাস করে।

কিন্তু ইতিহাসেও এমন কেউ নাই যে তাকে অধ্যবসায়ে হারাইতে পারে, সবাই কিনা কথা কথায় কথায় রবার্ট গ্রসের কথা বলে, আরে ঐ ব্যাটা তো একটা ভন্ড বিশ্বাসঘাতক, নিজের বন্ধুরে ধরায় দিসিল সম্পত্তির লোভে, পরে অনুশোচনায় পইড়া না ব্যাটা যুদ্ধ করতে আসল। তিনি তো শত কেন, হাজার বার দরকার পড়লেও ফিরে আসবেন এই সচলে, এদের দেখিয়ে দিবেন ব্লগ কিভাবে লেখে, ব্লগ কত প্রকার ও কি কি! তাই তিনি গুন গুকরে গান গাইতে গাইতে আবার লেখতে বস্লেন... ... ...

যদি তোর ব্লগ পড়ে কেউ না হাসে
তবে একলা পড় রে ... ... ...
একলা লেখ, একলা পড়
একলা লেখ, একলা পড়রে ... ... ...

No comments:

Post a Comment